জনবল সংকটে ১৬ বারের দেশসেরা চৌগাছা মডেল হাসপাতাল

জুলাই 29, 2025

নিউজ ডেস্ক:
চিকিৎসাসেবায় ১৬ বার দেশসেরা পুরস্কার পাওয়া যশোরের চৌগাছা মডেল হাসপাতালে জনবল সংকটে ধুকছে সেবা কার্যক্রম। বর্তমানে ২’শ ১০ টি পদের বিপরীতে শূণ্য রয়েছে প্রায় ১’শ টি পদ। চৌগাছা হাসপাতালে নারী, পুরুষ ও শিশু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫’শ থেকে ৬’শ রোগী উপস্থিত হয়। জনবল সংকটে ব্যহত হচ্ছে রোগীদের সেবা কার্যক্রম। যার ফলে মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট পদের সংখ্যা রয়েছে ২’শ ১০ টি। এর মধ্যে শূণ্য রয়েছে ১’শ টি পদ।

এর মধ্যে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩২টি। খাতা কলমে কর্মরত দেখানো হচ্ছে ১২ জন চিকিৎসককে। কিন্তু এই ১২ জনের ৩ জন দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। সংযুক্তিতে রয়েছেন আরও ২ জন চিকিৎসক। প্রশিক্ষণে রয়েছে ১ জন। বাকি ৬ জনের ২ জন প্রশাসনিক পদে কর্মরত। বাকি ৪ জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে ১ জন নাইট ডিউটি করতে হয়। নাইট ডিউটি করলে পরের দিন সেই চিকিৎসকের ডে অফ থাকে। বর্হিঃ বিভাগে রোগী দেখেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক। বর্তমানে মাত্র ৩ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে দেশসেরা এই মডেল হাসপাতালের বর্হিঃ বিভাগের চিকিৎসা সেবা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহসানুল মিজান রুমি বলেন, মেডিকেল অফিসার মৃদুল কান্তি ২০১৪ সাল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া ২০২২ সাল থেকে মেডিকেল অফিসার সায়মা নাহিদ শান্তা এবং (অর্থপেডিক) গোলাম রসুল কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি বলেন, তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও তাদেরকে বছরের পর বছর চৌগাছায় পদায়ন দেখানো হচ্ছে। তাদের নাম কর্তন না পর্যন্ত এই পদে নতুন চিকিৎসক পদায়ন করা সম্ভব না। স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ে বার বার চিঠি দিয়েও অনুপস্থিত থাকা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা।
মেডিকেল অফিসার ফারিয়া ইয়াসমিন ও শিশু কনসাল্টটেন্ট আব্দুস সামাদ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেষনে রয়েছেন।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা.আব্দুস সামাদ, মেডিকেল অফিসার রবিউল ইসলাম, ফারিয়া ইয়াসমিন আগে থেকেই যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেষনে রয়েছেন।
পক্ষান্তরে হাসপাতালে খাতা-কলমে অত্যন্ত জরুরি অ্যানেসথেসিয়া শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকলেও বাস্তবে তারা নেই। এছাড়া ২০ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।
এদিকে হাসপাতালটিতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ১’শ শয্যার কার্যক্রমের জন্য বিল্ডিং নির্মান কাজ শেষ হলেও সেবার জন্য হস্তান্তর করা হচ্ছে না।
প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী, এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয় এবং আয়াসহ এসব তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোর মধ্যে ৬৩টি রয়েছে শূন্য। যেকারনে বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বিগত দিনে চৌগাছা মডেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ইমদাদুল হকের চেষ্টায় অন্তঃসত্তাদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন। মা ও প্রসূতিসেবায় অবদান রাখার ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এটি উপজেলা পর্যায়ে একটানা দেশসেরা হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৮ সালেও হাসপাতালটি অর্জন করে জাতীয় পুরস্কার। ২০২০ সালে স্বাস্থ্যসেবায় সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করে পায় ‘হেল্থ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’। সর্বশেষ চৌগাছা মডেল হাসপাতাল ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দেশ সেরার প্রথম পুরস্কার পায়।
চৌগাছা উপজেলার কয়ারপাড়া আবু কালাম বুড়িন্দিয়া এলাকার সখি খাতুন সহ অনেকেই জানান, এখানে জরুরি মুহূর্তে সেবা পাওয়া কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুপুর আড়াইটার পর অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে সামান্য সমস্যায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে যশোর জেনারেল হাসপাতালসহ বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দেশসেরা হাসপাতালে আগের মতো চিকিৎসাসেবা নেই বলে তারা মন্তব্য করেন।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহসানুল মিজান রুমি বলেন ‘লোকবলের শূণ্যতা পুরনের জন্য অনলাইনে সফট কপি এবং হার্ডকপি উভয় প্রক্রিয়ায় আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মোট লোকবল ২১০ জন। এরমধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১২০ জন, ফাঁকা রয়েছে ৯০ জন।’

জানতে চাইলে যশোরের সিভিল সার্জন বলেন, চৌগাছার বিষয়টি আমার নজরে আছে। চেষ্টা চলছে লোকবল বাড়ানোর জন্য।

টপিক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

বিনোদন