যশোরে জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী, তরুণ্যের চোখে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

জুলাই 31, 2025

যশোর প্রতিনিধি
যশোর সংস্কৃতি কেন্দ্রের আয়োজনে স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লবের প্রথমবার্ষিকী।

রবিবার (২৭ জুলাই) বিকাল শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজনে ছিল ইতিহাসের পুনর্পাঠ, শহীদদের স্মরণ এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনের ডাক।

‘জুলাই বিপ্লব: তরুণ্যের ভাবনা ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাইয়ের রক্তাক্ত
ইতিহাস আমাদের জন্য শুধুমাত্র শোক নয়, এটি একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে স্বৈরাচার পতনের বার্তা। এই দিনে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়ের জন্য জীবন দিয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগের আলোকে আমাদের আগামীর পথ রচনা করতে হবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক গোলাম রসুল। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব ছিল ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের ফল। সেই ঐক্যই পতিত স্বৈরাচার সরকারকে চরম চাপে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু আবারও দেশে সেই ফ্যাসিবাদের দোসরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে ঘাপটি মেরে থেকে একই চিত্র ফিরে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের থেকে সাবধান হতে হবে। আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসনামলে বিরোধীদল তথা জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, গুম ও মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছিলÑযা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাকর অধ্যায়। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ না থাকে, তাহলে ফের সেই অন্ধকার যুগ ফিরে আসতে পারে। আজ যারা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করছে, ধর্ম-বর্ণ-পেশা-রাজনীতির নামে সংঘাত ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ঘাপটি মেরে বসে থাকা স্বৈরাচারীদের ভুলে গেলে চলবে না। যারা শহীদ হয়েছেন, যারা রক্ত দিয়ে আন্দোলনকে রাঙিয়ে দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগকে মনে না রাখলে জাতি অকৃতজ্ঞের কাতারে পড়বে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন শহীদ আব্দুল্লাহর গর্বিত পিতা আব্দুল জব্বার। তিনি কণ্ঠ ভার করে বলেন, আমার ছেলে জীবনের বিনিময়ে জাতিকে কিছু দিতে চেয়েছিল। আজ আমি গর্বিত যে তার সেই আত্মদান বৃথা যায়নি। কিন্তু আমি চাই, শহীদদের নাম যেন শুধু ব্যানারে না থাকে, তাদের আদর্শ যেন বাস্তবে রূপ নেয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান, ন্যাশনাল ডক্টরস ফ্রন্ট-এর সভাপতি ডা. শরফুজ্জামান রঞ্জ, ছাত্র প্রতিনিধি সামিউল আলম শিমুল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন যশোর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক এবং সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক আবুল হাশিম রেজা।
আলোচনার পরপরই এক আবেগঘন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় শহীদদের স্মরণে গান, আবৃত্তি ও নাট্যাংশ পরিবেশিত হয়। পুরো মিলনায়তন উপস্থিতি সকলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

ডিবি/ এআর

টপিক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

বিনোদন