প্রচণ্ড গরমে বড়দের চেয়ে অনেকটাই বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। তাপপ্রবাহে সহজেই পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে তাদের ছোট্ট দেহ। তৃষ্ণা পেলে অনেক সময় তারা তা ঠিকভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম না-ও হতে পারে। শিশুরা যদি বোঝার মতো বয়সী হয়, তাহলে গরমের সময় কী খাওয়া উচিত, কী খাওয়া উচিত নয়—এসব বিষয়ে শিশুকে জানিয়ে রাখা ভালো। পোশাক বা খেলাধুলার মতো রোজকার সাধারণ ব্যাপারেও যত্নবান হোন। নিত্যদিনের জীবনযাপনে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান বলেন, ‘গরমে শিশুর পানির চাহিদা মেটানোর অর্থ কিন্তু এই না, তাকে বারবার জবরদস্তি পানি পান করাতে হবে। বরং তার দেহের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করুন। শিশু প্রস্রাব করার সময় রং ও পরিমাণ খেয়াল করুন। শিশু যদি পর্যাপ্ত প্রস্রাব করে এবং প্রস্রাবের রং যদি হয় হালকা হলুদ খড়ের মতো, তাহলে
এই চিকিৎসকের কাছ থেকে এই সময়ে শিশুর যত্নে কিছু ভুল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পানি নিয়ে জোরাজুরি
বয়স ছয় মাস পার হলে শিশুকে পানি পান করানো শুরু করতে হয়। দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ থেকেই পানির চাহিদা অনেকটা মিটে যায়। পানি, অন্যান্য তরল ও ফলমূল থেকেও সে পানি পায়। সারা দিনই মাঝেমধ্যে শিশুকে পানি বা তরল খাবার খেতে উৎসাহ দিন। ফলের রস বা স্মুদি করে দিতে পারেন। তবে খুব বেশি চিনি দেওয়া পানীয় দেবেন না। তার সঙ্গে নিজেও পানি পান করুন। স্কুলে গেলেও যাতে পর্যাপ্ত পানি পায়, সে ব্যবস্থা রাখুন। তবে পানিশূন্যতার লক্ষণ না থাকলে শিশুকে পানি পান করানোর ব্যাপারে জোর করবেন না। অকারণ বিরক্তি ভাব বা জেদ, খানিকটা নিস্তেজ ভাব, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, গাঢ় হলুদ বা কমলা রঙের প্রস্রাব হওয়া, মুখ বা জিব শুকিয়ে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া প্রভৃতি হতে পারে পানিশূন্যতার লক্ষণ।
যা খুশি তা–ই খাওয়া
গরমে পানি ও খাবারের মাধ্যমে বহু মারাত্মক রোগ ছড়ায়। অস্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করা পানীয় ও খাবারের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয়। এগুলো এড়িয়ে চলার ব্যাপারে শিশুকে বুঝিয়ে বলুন, স্কুলের পথে একলা সুযোগ পেলেও যেন সে এসব খাবার না খায়। রসনার তৃপ্তি মেটাতে বাড়িতে তার পছন্দের খাবার ও পানীয় তৈরি করে দিন। আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করবেন না, যদি না ঠান্ডায় তার খুব বেশি অ্যালার্জি থাকে। মাঝেমধ্যে আইসক্রিম বা হালকা ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার সুযোগ দিন, তবে তা যেন নিরাপদভাবে তৈরি করা হয়। তাকে এটাও বুঝিয়ে বলুন, কড়া রোদ থেকে ঘরে বা ক্লাসে ঢোকামাত্রই ঠান্ডা কিছু খাওয়া উচিত নয়। একটু রয়েসয়ে তারপর সে খেতে পারে হালকা ঠান্ডা পানীয় বা খাবার।
পোশাক ও পরিচ্ছন্নতার ভুল
• বাইরে গেলে হাতাকাটা পোশাক পরানো ভুল। কারণ, তাতে রোদ আর ধুলা–ময়লায় বেশি ক্ষতি হয়। পাতলা সুতি কাপড়ের ফুলহাতা জামা-পায়জামা পরালে শিশু সুরক্ষিত থাকবে।
• আঁটসাঁট পোশাক পরানোও ভুল।
• গাঢ় রঙের পোশাক পরানোও উচিত নয়। কারণ, এগুলো তাপ ধরে রাখে।
• যিনি খাবার প্রস্তুত বা পরিবেশন করবেন, হাত ধোয়ার ব্যাপারে তাঁর উদাসীন হওয়াটা মারাত্মক ভুল।
• দুধ ও অন্যান্য খাবার খুব বেশি সময় বাইরে রাখা ঠিক নয়। এগুলো গরমে নষ্ট হয়ে যায়। সব খাবারই সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা জরুরি।
খেলার সময়কার ভুল
• কড়া রোদের সময় বাইরে বা ছাদে খেলতে দেওয়ার ভুলটা করবেন না। খুব গরমে ঘরেই খেলুক। দুপুরে স্কুলে থাকলেও যাতে সে ভুলটা না করে।
• শিশু যদি পার্কে খেলতে যায়, তাহলে তাকে আগেই ধাতব খেলার সামগ্রীগুলোতে উঠতে দেওয়া আরেক ভুল। প্রথমে এগুলোর তাপমাত্রা হাতের তালুর উল্টো পিঠ দিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। কারণ, দুপুরের রোদের তাপে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা ধাতবসামগ্রী পরেও গরম থাকতে পারে। এগুলো তাপমাত্রাসহনীয় হলে তাকে উঠতে দিন।
• পানির কাছে তাকে একা ছাড়ার ভুলটি করা যাবে না। ঝোপঝাড়ে শিশু যেন হাত না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।